ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে অশনি সংকেত

নিউজ ডেস্ক :: চলছে পর্যটন মৌসুম। ইতোমধ্যে ভরা মৌসুম ডিসেম্বরের অর্ধেক চলে গেছে। প্রতিবছর এই সময়ে বিশেষ করে বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামে। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারে উল্টো। আসেনি আশানুরূপ পর্যটক। এতে সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। এই নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

পর্যটন শিল্পে কেন এই অশনি সংকেত? এর কারণ হিসেবে দুটি বিষয় চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে প্রথম কারণ হলো, টেকনাফ-সেন্টমার্টি রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটক গমনে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণসমাবেশ হওয়ায় রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই দুই কারণে এবারের পর্যটন মৌসুম মন্দা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা অক্টোবর থেকে পর্যটন মৌসুম মনে করা হয়। তখন থেকে প্রতিবছর কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বাড়তে থাকে। কিন্তু এবার ডিসেম্বর শেষ হতে চললেও জাহাজ চলাচলে অনুমতি মেলেনি। অন্যদিকে এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও পড়েছে। এ কারণে গত আড়াই মাসে প্রত্যাশার অর্ধেক পর্যটকও আসেনি। ইতোমধ্যে পরীক্ষা শেষ হলেও জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। তাই ছুটি মিললেও বিজয় দিবসের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক আসেনি। এছাড়া রাজনৈতিক মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি অস্থিরতারও এক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে।

কক্সবাজার দি প্রেসিডেন্ট হোটেলের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, এবারের বিজয় দিবসের ছুটিতে তেমন বুকিং ছিল না। অনেক রুম খালি ছিল। আমরা গত বিজয় দিবসের ৫ দিন আগে থেকে হোটেল বুকিং ছিল। আমরা অনেক পর্যটকদের রুমও দিতে পারিনি। যার কারণে অনেক পর্যটক সড়ক ও ফুটপাতে রাতযাপন করেছিল। কিন্তু এই বছর তার উল্টো হয়েছে।

রেইন ভিউ রিসোর্টের মালিক মুকিম খান বলেন, ‘আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং হয়নি। এত কম পর্যটক আসবে সেটা কল্পনাও করিনি। বিশেষ করে কক্সবাজারে বিজয় দিবস ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে পর্যটকদের ভিড় হয়। কিন্তু এবারের বুকিং একদম কম।’

ট্যুর অপারেটস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-টুয়াক এর সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ঘিরেই কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা। বিগত ২০ বছর ধরে এই চিত্র দেখা গেছে। কিন্তু এবার অদৃশ্য কারণে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল করছে না। তাই পর্যটকেরা সেন্টমার্টিনের যেতে না পারায় কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। জাহাজ চলাচল না হলে সামনে যে সময় তাও এভাবে মন্দা যাবে।’

জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘স্কোয়াব’র সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘প্রতিবছর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ১০টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু এবার কক্সবাজার থেকে কর্ণফুলি জাহাজটি কোনো জাহাজ চলাচল করছে না। কর্ণফুলি জাহাজটি ব্যয়বহুল। এটি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পর্যটকদের জন্য দুর্বোধ্য হয়ে যায়। অন্যদিকে এটার ধারণ ক্ষমতাও এতটা নয়। সেকারণে পর্যটকেরা কক্সবাজার বিমুখ হয়ে পড়েছে।’

কক্সবাজার হোটেল-মালিক ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমকে নতুন করে সাজ-সজ্জা করে প্রস্তুত রয়েছে পাঁচশতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজ। কিন্তু ভরমৌসুমেও পর্যটক না আসায় হোটেল ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সবাই বড় ধরণের লোকসানের আশঙ্কা নিয়ে দিন পার করছে।’

কক্সবাজার হোটেল-মালিক ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কায়েস সিকদার বলেন, ‘পর্যটক না আসাতে সেন্টমার্টিনের জাহাজন চলাচল অধিকাংশ দায়ী। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কাও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। তাই এবার পুরোটা মৌসুম আশানুরূপ পর্যটক না হতে পারে।

পাঠকের মতামত: